মানুষকে কোন দৃষ্টিতে, কোন আঙ্গিকে বা কোন দর্শন দিয়ে বিচার করা হয়, সে বিষয়টা বরাবরই ইসলামের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক, উভয়ক্ষেত্রেই আলাপ-আলোচনা ও পর্যালোচনার মৌলিক একটি বিষয় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গত আলোচনায় আসত নারী-পুরুষের জীবনধারণের পদ্ধতি, সামাজিক অবস্থান, কর্মক্ষেত্র ও পৃথিবীতে আল্লাহর একজন প্রতিনিধি হিসেবে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে। আর প্রতিবারই ইসলাম এ’বিষয়গুলোর যৌক্তিক পর্যালোচনা করার পাশাপাশি বিরোধীদের অমূলক বা অযৌক্তিক মন্তব্যগুলো খণ্ডন করে এসেছে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, নারীদের সামাজিক অবস্থান এবং তাদের জীবনধারণের পদ্ধতি সম্পর্কিত আলোচনা।
প্রাক-ইসলামিক যুগে নারীর জন্মগ্রহণ করাটাই ছিলো যেন তার সবচে’ বড় অপরাধ। মানুষ হিসেবে নারীর কোনো সম্মান বা মর্যাদাই ছিলো না। গ্রীক ও রোমান সভ্যতায় নারীকে মনে করা হতো সকল অনিষ্টের মূল এবং সবচে’ নিকৃষ্ট জাতি। পরিবারে একজন নারীর মর্যাদা দাসীর সমতুল্য ছিলো। ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মে নারীকে অভিশপ্ত মনে করা হতো, ক্ষেত্রবিশেষে এখনও হয়। নারীর দেহে রূহ আছে কি-না, এ নিয়েও ছিলো তুমুল তর্ক-বিতর্ক। নারী তো আলাদা কোনো সত্তা নয়, তার জন্মই যেন হয়েছে শুধু পুরুষের সেবা করার জন্য। হিন্দুসমাজের ‘সতীদাহ’ প্রথাই প্রমাণ করে দেয়, নারীর অবস্থা সেখানে কতোটা করুণ।
কিন্তু ইসলামে মর্যাদার দিক দিয়ে পুরুষের থেকে একজন নারীকে কখনোই ভিন্ন করে দেখা হয়নি। বরং নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় এবং সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। অন্যান্য ধর্ম ও সভ্যতা যেখানে নারী-শিক্ষার কোনো অধিকারই স্বীকার করেনি, ইসলাম সেখানে নারীশিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তথাকথিত আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বও যেখানে নারীশিক্ষাকে ঘৃণার চোখে দেখতো প্রথমদিকে, তার বিপরীতে ইসলাম একেবারে শুরু থেকেই নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শিক্ষার সমান অধিকার ঘোষণা করে এসেছে। ইসলামের আগমনেই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অবহেলিত নারী সমাজ পেয়েছে মুক্তির সন্ধান।
রাসূল সা: এর নবুয়ত লাভের পূর্বের সেই জাহেলী যুগে আরবের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে নারীদেরকে কোন দৃষ্টিতে বা কতটা নীচু অবস্থানে দেখা হত, তা কারো অজানা নয়। ইসলাম এসে যখন নারীদেরকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিলো, স্বাভাবিকভাবেই তৎকালীন সকল সাম্রাজ্যের নারীর সামাজিক অবস্থানগত দর্শনের উপর চপেটাঘাত পড়ল। পুরুষের পাশাপাশি নারীও যে একজন পরিপূর্ন বিবেকবান মানুষ, তারও যে স্বাধীন ইচ্ছে রয়েছে, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে নেতৃত্ব দেওয়ার অসংখ্য ক্ষেত্রে যে নারীরও সমান সক্ষমতা রয়েছে, ইসলাম নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে তা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছিল।
পৃথিবীতে মানবজাতির বিস্তার ও খেলাফত প্রতিষ্ঠা শুধু পুরুষ দ্বারা কখনোই সম্ভব হয়নি। অতএব, বর্তমান এই প্রেক্ষাপটেও দুনিয়াকে বিনির্মাণ করতে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে নারী-পুরুষ উভয়েরই সরব উপস্থিতির প্রয়োজন বিদ্যমান।
ইসলাম যেমন নারীদেরকে সুমহান এক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে একজন মানুষ হিসেবে, ঠিক তেমনি, আল্লাহর খলিফা হিসেবেও তাদেরকে দুনিয়া বিনির্মাণের দায়িত্ব দিয়ে সম্মানিত করেছে। ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস থেকেই আমরা দেখতে পাই– আদালত ও মারহামাতপূর্ণ এই সভ্যতার অন্যতম কারিগর ছিলেন নারীরা।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সুদীর্ঘ বারোশো বছরের গৌরবজ্জ্বল ইসলামী সভ্যতার উত্তরাধিকারী এই মুসলিম উম্মাহর অবস্থা আজ খুবই করুণ ও জরাজীর্ণ। গোটা বিশ্বমানবতাকে আলোকিতকারী সেই সুমহান ইসলামী সভ্যতার আজ চরম অধঃপতন হয়েছে। নারীদেরকে দমিয়ে রাখা, পশ্চাদপদ করে রাখা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা এবং মানুষের আকল ও ফিতরাত বহির্ভুত ধর্মীয় বয়ান হাজির করাই বর্তমান মুসলিম উম্মাহর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ।
তাই, চৌদ্দশত বছর পর এসেও সমাজে নারীর প্রকৃত অবস্থান দৃঢ় হতে পারেনি। আজও নারীর অবস্থানগত দর্শনে প্রলেপ পড়ে রয়েছে। একদিকে পশ্চিমা সভ্যতা যেমন নারীদেরকে ঘর থেকে একেবারে বের করে এনে শুধু ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে, অপরদিকে ইসলাম যেন আজ নারীদেরকে একেবারে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু, আসলেই কি ইসলাম নারীদেরকে এভাবে আবদ্ধ করে রাখার অনুমতি দেয়? এটা কি ইসলাম প্রচারের নামে ইসলামকেই সংকীর্ণ করা নয়?
মূলত, ইসলামের একপ্রকার ধারক বাহক তথা ধর্মজীবী মোল্লা শ্রেণির সাংঘাতিক পশ্চাদপদ মনোভাব এবং তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতাই দায়ী এজন্য। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অধীন করে রাখার পক্ষে বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে থাকেন। ফলে, ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীর অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে, তাকে পুরুষের অধীনস্ত করে রাখা হচ্ছে। অথচ, ইতিহাসের পাতায় ইসলামের ধ্বজাধারী নারীদেরকে এভাবে পর্দার নামে গৃহবন্দী করে রাখার কি কোনো প্রমাণ আদৌ আছে?
পাশাপাশি, এই শ্রেণির আলেমরা তাদের সাংঘাতিক পশ্চাদপদ মনোভাব এবং তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতাকে ইসলাম হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কারণে পশ্চিমাদেশ ও তাদের গণমাধ্যমগুলি ইসলামের শাশ্বত বিষয়াবলির উপরে উপর্যুপরি আঘাত হানতে পারছে। ইসলামের প্রতি আঙ্গুল উঁচিয়ে অপপ্রচার চালাতে সফল হচ্ছে। বলার সুযোগ পাচ্ছে- “ইসলাম নারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। নারীদের বাক-স্বাধীনতায়, চিন্তার স্বাধীনতায়, চলাফেরার স্বাধীনতায় বিঘ্ন ঘটায়, পদে পদে বাধা দেয়।”
অথচ, প্রকৃত ইসলাম কখনও নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের গণ্ডিকে গৃহাভ্যন্তরে নির্দিষ্ট করে দেয়নি। বরং তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণও অনুমোদন করেছে। নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে। এসব প্রান্তিকতার কারণেই আজ আবার নতুন করে নারীর অবস্থানগত দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে।
ইসলামী সভ্যতায় নারীদের স্বরূপ:
ক) সৃষ্টিতত্ত্বের বিষয়বস্তুর দিক থেকে নারী এবং পুরুষকে মহান আল্লাহ একই মৌলিকত্ব বা একই মূল সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন।
খ) নারী-পুরুষ উভয়ই ‘মুকাররম’ তথা সম্মানিত এবং উভয়কেই ‘মাসুম’ তথা নিষ্পাপ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
গ) নারী-পুরুষ উভয়কেই মহান আল্লাহ খলিফা হিসেবে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। শুধুমাত্র পুরুষ নয়, বরং উভয়কেই এই পৃথিবী বিনির্মাণ করতে হবে।
ঘ) নারী ও পুরুষ উভয়কেই আল্লাহ ইলাহী ওহীর ‘মুখাতাব’ তথা ‘সম্বোধিত ব্যক্তি’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ঙ) ইনফাক ও তাসাদ্দুকের (সদকা) ক্ষেত্রে, জিহাদ ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে অমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকারের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষকে আল্লাহ একসাথে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
চ) দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সমানভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ছ) অপরাধের শাস্তি প্রদান এবং ভালো কাজের পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সমতা বজায় রাখবেন।
জ) সামাজিক জীবনে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কাউকে বঞ্চিত বা বৈষম্য করা হয়নি।
ঝ) পুরুষদের যেমন মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে নারীদেরও।
ঞ) রহমত, দয়া, ভালোবাসা ও ইহসানের মাধ্যমে রাসূল (স.) সবসময় নারীদের পক্ষে কথা বলেছেন।
নারীদের উচিত নিজেদের চেনা এবং তাদের সৃষ্টির পেছনের হাকীকত সম্পর্কে জানা ও বোঝার চেষ্টা করা। তবেই সে তার রবকে চিনতে পারবে, জানতে পারবে এবং খুঁজে পাবে। সারা দুনিয়ায় যেখানে নারীদের প্রতি অত্যাচার, জুলুম, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হচ্ছে, আবার অন্যদিকে তাদেরকে পণ্যরূপে ব্যবহার করা হচ্ছে, উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় কোরআনি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নারীদের অবস্থান জেনে নিয়ে সেই আলোকে চেতনা জাগ্রত করা, জীবনকে অনুধাবন করা আজ সময়ের দাবি।
আমাদের পরিবার ও সমাজজীবনকে লালনকারী মূল্যবোধসমূহ:
ইসলামী সভ্যতার মৌলিক এবং সৌহার্দ্য-ভালোবাসার বিশ্বস্ত এক প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। মানুষের পবিত্র আশ্রয়স্থল হলো এই পরিবার। পরিবারের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে পরিবারটাকে আগলে রাখার, ঠিক তেমনি সেই পরিবার থেকে কেমন সন্তান গড়ে উঠবে, ভবিষ্যতে দুনিয়া বিনির্মাণের মৌলিক শিক্ষা কী কী হবে; সেসব বিষয়ে জ্ঞানার্জন করবে একজন নারীর নিকট থেকে। অর্থাৎ একজন শিক্ষিত মায়ের নিকট থেকে।
এভাবেই, একজন মায়ের নিকট থেকে যখন একজন সন্তান সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, তখনই জ্ঞান, হিকমত ও মূল্যবোধ অর্জনের দ্বারা শক্তিশালী একটি ব্যক্তিত্ব গঠন সম্ভব হবে। আর এভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব গঠনের মাধ্যমেই গোড়াপত্তন হবে একটি শক্তিশালী সমাজের। এরপর, সেই সেই শক্তিশালী সমাজ গঠন বা শক্তিশালী একটি সমাজ বিনির্মানের মাধ্যমেই মাথা তুলে দাঁড়াবে তখন একটি শক্তিশালী জাতি ও সভ্যতা।
অতএব, দুনিয়া বিনির্মাণ, আখলাকভিত্তিক একটি সভ্যতা গঠন এবং একটি জাতি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন তাই নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে সেই যোগ্যতাও সৃষ্টি করে দিয়েছেন। দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হলে উভয়েরই জ্ঞান, হিকমত ও মারেফাতের প্রয়োজন রয়েছে। যেকারণে ইসলামে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (স.) এর ভাষায়, “প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্যই জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।” এমনকি তিনি অর্থ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে নিজের স্ত্রীদেরকে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।
পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনকে লালনকারী মূল্যবোধসমূহ আসলে বিচ্ছিন্ন কোনো মূল্যবোধ নয়। বরং একজন মানুষের ইসলামে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পাঁচটি মূলনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামে প্রবেশ বা মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি মূলনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথা:
১. আকলে সলীম
২. ইলমে সহীহ
৩. ঈমানে সাদেক
৪. আমলে সালেহ
৫. আন্তরিকতা এবং ইখলাস
এসব মূলনীতিগুলো মূলত একটি অপরটির পরিপূরক বা নির্ভরশীল। একটি ছাড়া আরেকটি পূর্ণতা পায় না।
এছাড়াও একটি পরিবারের সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, সফলতা এবং সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী মূল্যবোধসমুহ নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে অধ্যায়টিতে। মূল্যবোধগুলো হলো:
১. সাদাকাত
২. আদালত
৩. ইহসান
৪. ইফফাত
অর্থাৎ, এ মূলনীতিগুলোর উপর ভিত্তি করে পরিচালিত পরিবারগুলোই মূলত সুন্দর ও সুখী-সমৃদ্ধশালী; সর্বোপরি একটি শক্তিশালী পরিবারে পরিণত হয়।
আখলাকভিত্তিক সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা:
একটি শক্তিশালী সভ্যতা গড়ে তোলার মূল কারিগর হলো একটি শক্তিশালী পরিবার। কারণ, একটি পরিবার থেকেই জ্ঞান ও আখলাক-সম্পন্ন একজন শক্তিশালী মানুষ গড়ে ওঠে। আর এমন অসংখ্য ব্যক্তিত্ব উঠে এলেই তো তখন একটি শক্তিশালী আখলাকভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।
ইসলামী সভ্যতায় জ্ঞান ও মূল্যবোধ এ দু’টি বিষয় অর্জিত হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট প্রেরিত ওহীর মাধ্যমে। সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলীল পেশ করে থাকে। আল্লাহ বলেন—
“পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”
এরপর রাসূলের স্ত্রীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়েছে পরিবার থেকে পরিবারে। অতএব, আখলাকভিত্তিক সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকাকে কখনই ছোটো করে দেখা উচিত নয়।
ইসলামী সভ্যতার প্রানসত্তা দানকারী তথা ইসলামী সভ্যতাকে গঠনকারী তিনটি মৌলিক বিষয় হলো–
১. তাওহীদে বিশ্বাস
২. তাওহীদে বিশ্বাস কর্তৃক সৃষ্ট জ্ঞান
৩. এ দুই উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত আখলাকী দায়িত্ব এবং সকল কাজে আখলাকের প্রতিফলন।
এ বিষয়গুলোকে সমাজ গঠনের আখলাকী মূলনীতিও বলা যেতে পারে।
অতএব, আদর্শ একটি পরিবার গঠনের মধ্য দিয়ে সমাজকে পুনর্গঠন করে সমগ্র মানবজাতিকে একটি বসবাসযোগ্য দুনিয়া উপহার দেওয়া সম্ভব। আর এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই ইসলামী সভ্যতাকে পুনর্জাগরিত করতে, মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে, সেই মুসলিম সোনালী সভ্যতাকে ফিরিয়ে আনতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে আখলাকসম্পন্ন হতে হবে। উত্তম গুনাবলির মাধ্যমে নিজেকে সজ্জিত করে দুনিয়া বিনির্মাণকারী ও সমাজ পুনর্গঠনকারী একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠার চেতনা জাগ্রত করতে হবে। নিজেদের কাজের মধ্যে আখলাককে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বেই একে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং তখনই এটি তার মূল লক্ষ্যে উপনীত হবে।
তথ্যসূত্র :
ইসলামী সভ্যতায় নারী – ড. খাদিজা গরমেজ