শিউলিমালা একাডেমি

উসূলশাস্ত্রের গুরুত্ব এবং হাল আমলে উসূলের প্রয়োজনীয়তা

জ্ঞানের প্রতিটি শাখাকে ধারাবাহিকতা দানকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উসূল। এই উসূলের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। তবে আমাদের পরিচিত উসূলের সাথে মূল উসূলের তফাৎ অনেক। সাধারণত, উসূলকে আমরা দ্বীনি জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে জেনে থাকি এবং ফিকহ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সাথে সম্পৃক্ত রেখে তাকে পাঠ করে থাকি।

প্রশ্ন হলো, উসূল কি শুধু সামান্য জানাশোনা জ্ঞানার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, নাকি আরো বিস্তৃত?

মূলত, উসূল জ্ঞানের শাখা থেকে বেরিয়ে ইবাদত, আখলাক, আমল, সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস—সর্বোপরি সবকিছুর সাথে সম্পৃক্ত সামগ্রিক একটি বিষয়। বলা চলে, এসকল কিছুর মূলে উসূলের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। উসূলের সূত্রপাত হয় মূলত নববী যুগ থেকেই। ইসলাম আসার ২০০০ বছর আগ থেকেই যেসব সকল অঞ্চল শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ছিলো, সেসব ইসলামের আত্মপ্রকাশের ১০০-১৫০ বছরের মধ্যেই মুসলমানদের সামনে বড় বড় সমস্যা এসে দাঁড়ায়। তখন মুসলমানরা মূলত যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, সেটি হলো জ্ঞানের ব্যবস্থাপনা। অর্থাৎ দ্বীনি জ্ঞানের সকল ধারার সাথে সমন্বয় করা ছিলো চ্যালেঞ্জের বিষয়। এমন সময় মুসলমানরা উসূলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে। মূলত, উসূলকে প্রকৃত অর্থে অনুসরণ না করার দরুন মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। সেই মতপার্থক্য থেকেই পরবর্তীতে বিভিন্ন ফিরকা বা দলের উৎপত্তি হয়। মুসলিমদের এহেন অবস্থায় সকলের মাঝে সমন্বয় সাধন ছিলো খুবই জরুরি একটি বিষয়। উসূলের বিষয়টা এভাবেই সকলের সামনে উঠে আসে।

এরপর, ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইসলামী জ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, ইসলামের দাওয়াত শির দরিয়া এবং আমু দরিয়া পার হয়ে ফারগানা উপত্যকায় মাওয়ারাউন নাহার অঞ্চলে এসে একটি উসূল এবং মেথডোলজিতে রূপান্তরিত হয়। সেখান থেকেই গড়ে উঠে ইমাম সারাখসি, ইমাম জুয়াইনি, ইমাম গাযযালী, ইবনে সিনা, আল ফারাবিদের মতো বড় বড় মুহাদ্দিস, ফকিহ ও দার্শনিক ব্যক্তিবর্গ। সেখানে গিয়ে দর্শন ও তাসাউফ একত্রিত হয়ে জ্ঞান ও ওহীর মাঝে মেলবন্ধন ঘটে। তবে সময়ের সাথে সাথে উসূলের এই ধারাবাহিকতায় ব্যাঘাত ঘটতে থাকে এবং পরবর্তীতে ইসলামী জ্ঞানের একটি শাখার মাঝে সংকীর্ণ করে পাঠ করার দরুন উসূল তার গ্রাউন্ড হারাতে শুরু করে।

অর্থাৎ উসূলকে কেবল তাফসির, কালাম, হাদিস, ফিকহ—এ সকল জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত রেখে বাকি সব জ্ঞানের বিষয়গুলোকে প্রাকৃতিক জ্ঞান, আকলী জ্ঞান, নাকলী জ্ঞান, দুনিয়াবী জ্ঞান হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করে বিভাজন করে ফেলা হয়েছে। যার ফলে এটির সামগ্রিকতায় ব্যাঘাত ঘটে। অথচ হাদিস যেমন ইসলামী জ্ঞান; ফিজিক্স, মেটাফিজিক্স, গণিত, ফিলোসফি ততটাই ইসলামী জ্ঞান। আমাদের সমগ্র ইতিহাসকালে এসব জ্ঞানের মাঝে বিভাজন না হবার জন্য মুসলমানগণ ইসলামী জ্ঞানসমূহকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেন। যেমন, উচ্চ (আলী) জ্ঞান, প্রায়োগিক (আমলী) জ্ঞান, তাত্ত্বিক (নাজারী) জ্ঞান, সাহায্যকারী (আলাত) জ্ঞান।

এছাড়াও আমরা দেখি, প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে মুসলিম আলেম ও দার্শনিকগণ জ্ঞানের শ্রেণিবিন্যাস এবং মারাতিব সংশ্লিষ্ট সকল জ্ঞানকে অভিন্ন একটি ধারার মধ্যে একত্রিত করে এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ আমাদের জন্য মিরাস হিসেবে রেখে গিয়েছেন। যেমন, ফিকহুল আকবার, আর রিসালা, আল মুসতাশফা। পাশাপাশি, ইমামদের থেকে শুরু করে দার্শনিক পর্যায়ে ইবনে সিনা, ইবনে রূশদ, আল্লামা ইকবাল প্রমূখদের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোকেও আমরা উসূলের গ্রন্থ হিসেবে জানি।

কুরআন নিজেই একটি উসূলের গ্রন্থ, যদি আমরা সেই আলোকে পড়তে জানি। আসবাবে নুযূল, নাসেখ-মানসুখের মতো বিষয়সমূহ, একজন মানুষের উপর কোরআন অবতীর্ণ হওয়া এবং যে নবীর উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সে নবী কর্তৃক কোরআনকে তার জীবনে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন—এগুলোর প্রতিটিই উসূলের একেকটি অনুপম উপমা। উদাহরণস্বরূপ,

اَلَمْ تَرَ كَیْفَ ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَیِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَیِّبَةٍ اَصْلُهَا ثَابِتٌ وَّ فَرْعُهَا فِی السَّمَآءِۙ

“তুমি কি দেখছো না আল্লাহ কালেমা তাইয়েবার উপমা দিয়েছেন কোন জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে৷”

এই আয়াতকে পাঠ করার সময় আমরা একে শুধু কালেমার আয়াত হিসেবেই বুঝে থাকি। কিন্তু, এসব আয়াতসমূহ একইসাথে উসূলের প্রতিও ইশারা করে থাকে।

আবার হাদিসের দিকে লক্ষ্য করলেও একটি উদাহরণ পাই। হাদীসটি হলো,

مِنْ أَهْلِ حِمْصَ مِنْ أَصْحَابِ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا أَرَادَ أَنْ يَبْعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ قَالَ ‏كَيْفَ تَقْضِي إِذَا عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ ‏.‏ قَالَ أَقْضِي بِكِتَابِ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ ‏”‏ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ أَجْتَهِدُ رَأْيِي وَلاَ آلُو ‏.‏ فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَدْرَهُ وَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ لِمَا يُرْضِي رَسُولَ اللَّهِ .

অর্থাৎ, রাসূলে আকরাম (সঃ) যখন মুয়াজ ইবনে জাবালকে (রাঃ) ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তিনি মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, যদি তোমার কাছে কোন বিষয় আসে, তাহলে সে ব্যাপারে কিভাবে সিদ্ধান্ত দিবে?’

মুয়াজ (রাঃ) জবাবে বলেন, ‘আমি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিব।’

রাসূলে আকরাম (সঃ) তার জবাব শুনে বলেন, ‘যদি সেখানে না পাও, তাহলে?’

মুয়াজ (রাঃ) জবাবে বলেন, ‘তাহলে রাসূলুল্লাহর সুন্নত অনুসারে।’

রাসূল (সঃ) তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি রাসূলের সুন্নতে এবং আল্লাহর কিতাবেও না পাও, তাহলে?’

মুয়াজ (রাঃ) জবাবে বলেন, ‘আমি আমার বুদ্ধি বা রায়কে ব্যবহার করে ইজতিহাদ করব।’

এটা শুনে রাসূলে আকরাম (সঃ) তার (মুয়াজ) বুকে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি তার রাসূলকে সাহায্য করেছেন এমন মানুষ দ্বারা, যাদেরকে পেয়ে আল্লাহর রাসূল (সঃ) সন্তুষ্ট।’

এ হাদীসটিও উসূলের দিকে ইশারা করে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কর্তৃক তার শাসনকালে আবু মুসা আল-আশআরী (রাঃ), আবু উবায়দা (রাঃ) এবং কাজী শুরায়হাকে প্রেরিত চিঠিতে বর্ণিত বা উল্লেখিত বিষয়সমূহকে যদি আমরা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাই, মহান আল্লাহ তার প্রেরিত গ্রন্থটিকে উসূলের আলোকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার দিকে ইশারা করেছেন।

এভাবে করে ইজমা, কিয়াস থেকে সকল বিষয়ের মূলে উসূলের অবস্থান রয়েছে। উসূল এমন কোনো বিষয় না যে, যা কেবল লিখিত রূপেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বরং যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দেবার ক্ষেত্রে সময় ও অবস্থার আলোকে উসূলও পরিবর্তিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বিশেষ করে ইজতিহাদ ও সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত উসূল জীবন সমস্যার সমাধানের জন্য পরিবর্তিত হতে থাকে। উসূলের এই ধারা সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত জারি ছিলো। ইমাম শাতিবীর পর মুসলিম উম্মাহর মধ্যে উসূলের চিন্তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত উসূলের সামগ্রিকতা নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে ইমামগণ নিজ নিজ সময়ে নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করে যান, তারপরও খিলাফতের পতনের পর থেকে মুসলিমদের মাঝে ইখতিলাফি বিষয় প্রকটভাবে দেখা যাবার দরুন এখন পর্যন্ত এই উসূলকে আমরা ধারণ করতে পারিনি।

বলে রাখা ভালো, উসূল আর মেথডোলজি এক বিষয় না। মেথডোলজি মূলত মানহাজের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়, যা সামগ্রিক না। এই মানহাজ কেবল দ্বীনি বিষয়সমূহের উপর নির্ভর করে। আর উসূল হলো সামগ্রিক একটি বিষয়, যেটি সকল বিষয়কে সামগ্রিকতা দান করে। যেমন, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, কালাম, মানতিক, গণিত, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, আখলাক—এগুলোর প্রতিটি বিষয়ের সাথেই রয়েছে উসূলের সম্পৃক্ততা। কিন্তু, সময়ে সময়ে উসূলের সাথে উক্ত বিষয়গুলোর সম্পৃক্ততা বিচ্ছিন্ন হবার দরুন আমাদের মাঝে মতানৈক্য, বিতর্ক, দলাদলি, বিভক্তি, ও বিভাজনের মতো সমস্যাসমূহ সৃষ্টি হয়েছে। সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সভ্যতাকে ধারাবাহিকতা দানকারী আলেমগণ হলেন উসূলবিদগণ। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম গাযালী, ইমাম শাতেবী, ইবনে খালদুন প্রমুখ ব্যক্তিরা এখনো এতো প্রাসঙ্গিক হবার কারণ মূলত এটিই।

এই প্রেক্ষিতে উসূলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে পারিনি। ফলশ্রুতিতে উসূলের সংকীর্ণতার কারণে আমাদের সমস্যাসমূহ সমাধানের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। পরিবর্তনশীল বিষয়ের সাথে অপরিবর্তনীয় বিষয়কে, দ্বীনি বিষয়ের সাথে সাংস্কৃতিক বিষয়কে, অভ্যাসের সাথে ইবাদতকে, স্থানীয় বিষয়ের সাথে বিশ্বজনীন বিষয়কে, আঞ্চলিক বিষয়ের সাথে দ্বীনি বিষয়কে আলাদা করে পাঠ করতে ও বুঝতে সক্ষম হচ্ছি না।

এই উসূলবিহীনতাই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এই বিতর্ক মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে এতটাই বিভাজন সৃষ্টি করে দিয়েছে যে, একে অপরকে দ্বীন থেকে খারেজ করে দেয়ার মতো অপরাধ করতেও কেউ দ্বিধা বোধ করছে না। অন্যদিকে এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছড়িয়ে দেয়া শুরু হয়েছে প্রবলভাবে। যেহেতু ‘উসূল’ একটি সুবিশাল বিষয়, সেহেতু এটিকে ভালোভাবে অনুধাবন ছাড়া কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাওয়ার সুযোগ নেই।

উসূলের উদাহরণ দেওয়া যায় একটি গাছের মূল-এর সাথে। যার শাখা-প্রশাখা এই মূলের সাথে সম্পৃক্ত। মূল ছাড়া এই শাখা-প্রশাখার কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমনি উসূল হলো একটি গাছের মূলভিত্তি। যাকে পরিগ্রহ করেই রচিত হয়ে থাকে তার শাখা-প্রশাখা (জ্ঞানের শাখা)। অর্থাৎ, উসূলকে কেন্দ্র করেই জ্ঞানের শাখাগুলো বিস্তৃত হয়েছে।

উসূল শুধুমাত্র ফিকহের নিয়মনীতি উৎপাদনের পদ্ধতিকে ব্যাখাকারী এবং মূলনীতি দানকারী একটি জ্ঞানই নয়, বরং উসূল একইসাথে দ্বীনি জ্ঞানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর সীমানাকে নির্ধারণকারী একটি বিষয়। এমনকি, মুসলমানগণ কর্তৃক তৈরিকৃত জ্ঞানসমূহকে দার্শনিক পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সহায়কের ভূমিকাও পালন করে থাকে এই উসূল। বিশেষ করে, আইন ও আখলাকের ক্ষেত্রে মুসলমানগণ দার্শনিক পর্যায়ে যে জ্ঞান উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে, এর পেছনে জমিন প্রস্তুত করতে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেছে ‘ইলমূল উসূল’। এর পাশাপাশি ইলমূল উসূল গঠনপদ্ধতি নির্ধারণকারী, নিয়মনীতি প্রণয়নকারী এবং নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানে উসূল বলতে শুধুমাত্র জ্ঞানের একটি শাখাকে বুঝানো হচ্ছে না, বরং উসূল একইসাথে চিন্তা করার একটি পদ্ধতির নাম। ফলশ্রুতিতে, ইলমুল উসূল মুসলমানদের অভিন্ন রেফারেন্সের উৎস হওয়ায়

উসূলের নিয়ম-নীতির বাহিরে কোনো ব্যাখা-বিশ্লেষণই গ্রহণযোগ্য নয়।

শুধু তাই নয়, দুনিয়ায় আদালত প্রতিষ্ঠা করা, ইনসাফ কায়েম করা, সত্য ও সুন্দরের জন্য কাজ করা, বাতিলের পক্ষপাতিত্ব না করা—আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি। এই গন্তব্যস্থলে পৌঁছাকেও ‘উসূল’ বলে অভিহিত করতে পারি। কারণ প্রতিটি বিষয়ের মূলভিত্তিতে যখন আমরা পৌঁছাতে পারবো, তখনই সে বিষয় থেকে আমরা কোনো কিছু উদঘাটন করে বের করে আনতে পারবো। সে আলোকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সমাধান বা প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারবো।

কোনো কিছুর বাহ্যিকতা দেখেই যদি সে জিনিসটিকে আমরা পর্যালোচনায় নিয়ে আসি, তাহলে সেটি কখনও ফলদায়ক হয় না। বরং সে জিনিসটির বাহ্যিকতা ও মূল রূহকে যখন আমরা একসাথে পাঠ করতে সক্ষম হবো, তখনই সে জানা-বুঝাটা পরিপূর্ণতা লাভ করে।

এজন্যই মানবতার ইতিহাসে ‘ইলমুল উসূল’ হলো এক অনন্য অর্থবহ জ্ঞানের নাম, যা সকল জ্ঞানকে অর্থবহতার দিকে ধাবিত করে থাকে। আমাদের মুসলমানদের উচিত ছিলো বিশেষ এই জ্ঞান নিয়ে গর্ব করা। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, শত শত বছর ধরে এই জ্ঞান চর্চা না থাকার কারণে হাতে গোনা কিছু উসূলের কিতাবকে উসূলের গ্রন্থ হিসেবে ধরে নিয়ে আমাদের মূল জ্ঞানের ধারাকে হারিয়ে আজ ব্রিটিশ একাডেমিয়া নির্ভর জ্ঞানের গোলামে পরিণত হয়েছি।

এজন্য যে বিষয়টি খুব গুরুত্বের দাবিদার, তা হলো, ইসলামী চিন্তার ইতিহাসকে সামগ্রিকভাবে একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত রেখে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে পাঠ করে, ইসলামী সভ্যতার ধারণাকে সামনে রেখে কোন উৎসমূহকে মূলনীতি হিসেবে নেওয়া এবং এ সকল উৎসসমূহের সাথে কেমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে—এমন একটি উসূল ও মেথোডলজি দাঁড় করানো। যা ইসলামী জ্ঞান ও চিন্তার অভ্যন্তরীণ সামগ্রিকতা, সঙ্গতি ও ধারাবাহিকতাকে সামনে রাখবে এবং বিভিন্ন ইসলামী ক্ষেত্রগুলোকে একই উসূলের আলোকে একত্রিত করে সঠিক চিন্তার মাধ্যমে মানবজীবনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *